ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুরে (৭নং ওয়ার্ড) পাটোয়ারী বাড়িতে ইসরাত জাহান উর্মি নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর দেবর রায়হান (২০), ননদ রুনা বেগম (৩০) ও শাশুড়ি জাহানারা বেগম (৪৫) এর বিরুদ্ধে।
মামলার এজাহার ও এফআইআর সূত্র ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে দু'পক্ষের লোকজন ও সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে- হত্যার শিকার গৃহবধূ ইসরাত জাহান উর্মি (১৯) সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের (সাবেক ৫নং ওয়ার্ড সুলতানপুর) (বর্তমান ঠিকানা ১নং ওয়ার্ড মজুপুর) গ্রামের কাতার প্রবাসী মোঃ নুরুল আফসার ও মনোয়ারা বেগম দম্পত্তির প্রথম সন্তান। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে ফেনী সদরের ধলিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওর্য়াডের দৌলতপুর পাটোয়ারী বাড়ির আবু আহমদের পূত্র প্রবাসী মিজানুর রহমানের সহিত সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বিবাহের কিছু দিন যেতে না যেতে গৃহবধূর স্বামী প্রবাস থেকে মা ও ভাইবোনকে দিয়ে উর্মির প্রতি যৌতুকের টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। কোরবানির ঈদের সময় গরু ও নানান উপহার সামগ্রী না পাঠানোর কারণে গৃহবধূর মাকে বেড়াতে গেলে গালমন্দ করে ও ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে অপমান অপদস্ত করা হয়। এবং এর মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
নিহত গৃহবধূর মা মনোয়ারা বেগম জানান বিয়ের আগে ও পরে স্বর্ণালংকার নগদ অর্থ ও নানান উপটোকন দেওয়া হয়েছে তবুও মেয়ের প্রতি তাদের বিদ্রুপ ও নির্যাতন বন্ধ করা যায়নি। মেয়ের দেবর সবসময় অনৈতিক প্রস্তাব দেয় ও উর্মিকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়, এগুলো নিয়ে পারিবারিক কলহ জটিল আকার ধারণ করে। এর আগে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার গর্ভের সন্তান প্রতিবন্ধী হবে বলে জোরপূর্বক এবরশন করা হয়েছে।
যৌতুক লোভী শাশুড়ী জাহানারা বেগম ননদ রুনা ও দেবর রায়হান ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১১ টায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ও গলাটিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে লাশ খাটের উপর বিছানা ছাদর দিয়ে ঢেকে রাখে এবং স্থানীয় মেম্বার ও পুলিশকে খবর পাঠায়, রাত সাড়ে ১২টায় স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হুদা নিহত গৃহবধূর মাকে কল দিয়ে জানায় যে আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মেয়ের মা সহ আত্মীয় স্বজন সেখানে যাওয়ার পর মেয়েকে খাটের উপর শায়িত অবস্থায় মৃত দেখতে পায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়, বিছানায় প্রস্রাব করা অবস্থায় দেখে, পুলিশও তাকে ঐ অবস্থায় পেয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে বলে জানিয়েছেন মনোয়ারা বেগম। পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আত্মহত্যার মতো কোন আলামত দেখা যায়নি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীরা ও গৃহবধূর মা পারিবারিক কলহের বিষয়ে বিশদ তথ্য এই প্রতিবেদককে জানান ও এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে সন্দেহ পোষণ করে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হুদা গৃহবধূ উর্মির মৃতদেহ তার শয়ন কক্ষের খাটের উপর থেকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান-
ঐ পরিবারে পারিবারিক কলহ ছিল, গত কোরবানীর ঈদের সময় গরু ও উপহার সামগ্রী না দেওয়ার কারণে দুই বেহাইনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়েছে, আমি সহ গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। গৃহবধূর দেবর রায়হান পড়ালেখা করেনা, বখাটেপনা করার কারণে তার পিতা তাকে মারধোর করেছিল ও বাড়ী ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বেলাল প্রতিবেদককে জানিয়েছেন গৃহবধূ উর্মিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়নি, মৃতদেহটি খাটের উপর শায়িত অবস্থায় পেয়েছেন।
ফেনীর মডেল থানার ওসি শহীদুল ইসলাম লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এই বিষয়ে ৩জনকে আসামি করে আত্মহত্যা পরোচনার (পেনাল কোড ৩০৬ ধারায়) একটি মামলা হয়েছে, বিষয়টি হত্যা কি আত্মহত্যা তাহা তদন্তাধীন রয়েছে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।